You will be the first to get all the updates related to education on this website.Students have the opportunity to take the test on this website.They will be able to test each chapter and be able to verify yourself.All the notices of the Department of Secondary and Higher Secondary Education are published here first.
উড়ােজাহাজ আবিষ্কার করার ভেতর দিয়েই মানুষ তাদের চিরকালের প্রিয় বসতি এই বিশাল পৃথিবীকে একেবারে হাতের মুঠোয় এনে ফেলেছে । মানুষ জয় করেছে পৃথিবীকে, জয় করেহে, আকাশকেন্দ্র। বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কারগুলাের মধ্যে একটি উড়োজাহাজ। বলতে গেলে এই আকাশযান আবিষ্কারের ভেতর দিয়েই মানবসভ্যতা অত্যন্ত দ্রুত এগিয়ে গেছে সামনের দিকে। এই বিশাল কৃতিত্বের যাঁরা প্রকৃত্ব দাবিদার, তাঁরা ছিলেন সহােদর পুভাই। বড় ভাই উইলবার রাইট (Wilbur Wright) এবং ছােট ভাই অরভিল রাইট (Orvile Wright)। কিন্তু পৃথিবীর মানুষের কাছে এরা দুজন আজ এক নামেই অর্থাৎ রাইট ব্রাদার্স ('Wright Brothers) নামেই পরিচিত । যারা জানেন না তারা কেউ কেট্ট এমনও মনে করে থাকেন। যে, এঁরা হয়তাে একই ব্যক্তি।রাইট ব্রাদার্স নামে কোনাে একজন লােক মাত্র? কিন্তু তা নয়। এক নামের অন্তরালেই লুকিয়ে আছেন দুই কৃতী পুরুষ—দু'সহােদর ভাই। উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইট-এর পিতা ছিলেন মিলটন রাইট। তিনি পেশায় ছিলেন যাজক। তিনি সংসার পেতেছিলেন অনেক বেশি বয়সে। তার যখন ৪১ বছর বয়স, তখন তিনি সুসান ক্যাথরিন নামের একজন সুন্দরী মহিলাকে বিয়ে করে সংসারধর্মে প্রবেশ করেন। ক্যাথরিনের ঘরে তাঁদের হয়েছিলাে পাঁচ ছেলেমেয়ে। বড় ছেলে উইলবার রাইট-এর জন্ম ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল এবং ছােট ছেলে অরভিল রাইট-এর জন্ম ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট। পরবর্তী কালে মিলটন রাইট অবশ্য আবারও ঘরসংসার ফেলে ঝুঁকে পড়েন ধর্মের দিকে। চার্চের বিশপ হয়ে তিনি যাপন করেন ধার্মিকের শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন। ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের কথা। বড় ভাই উইলবারের বয়স তখন এগার আর অরভিলের। বয়স সাত বছর। এই সময় একদিন তাদের পিতা ছেলেদের জন্য কিনে দেন একটি মজার খেলনা। এটি উড়তে পারত। কাগজ, বাঁশ এবং কর্ক দিয়ে তৈরি খেলনাটি ঘরের। মেঝেতে নামিয়ে দিলে সােজা ওপর দিকে উঠে যেত হেলিকপ্টারের মতাে। এই মজার খেলনাটি দেখে ভারি কৌতূহল হতাে দু'ভাইয়ের । আর অমনি মনের মধ্যে জেগে উঠত নানারকমের প্রশ্ন। তারা ভাবত, যদি ক্ষুদে এই খেলনাটি উড়ে ছাদ পর্যন্ত যেতে পারে, তা হলে অনেক ভারি বস্তু আরও অনেক ওপরে উঠতে পারবে নিশ্চয়ই। তা হলে দেখাই যাক না, এমন, হয় কি না! ভাবনা মতাে দু'ভাই ঠিক একই ধরনের, তবে একটু বড় আকারের আরেকটি খেলনা তৈরি করার চেষ্টা করতে লাগলেন। বেশির ভাগ কাজ উইলবারই করলেন। কারণ অরভিলের বয়স তখনও অনেক কম। অবশেষে বড় আকারের খেলনা একটা তৈরি হলাে বটে, কিন্তু তাঁরা যা ভেবেছিলেন, তেমনটা মােটেই ঘটল না। দেখা গেল, খেলনাটা বড় করে তৈরি করা হলেও, তার উডডয়নক্ষমতা ততটাই কমে গেছে। ছােট খেলনাটা যেমন তিড়িং করে লাফ দিয়ে ছাদ পর্যন্ত উঠে যেত, বড়টা তেমন করে লাফ দিতে পারছে না। তবু এই খেলনার ঘটনা দিয়েই কিন্তু শুরু। তারা যে পরবর্তীকালে বিশ্বের বিস্ময় উড়ােজাহাজ তরি করেছিলেন, তার শুরু হয়েছিল ঠিক এভাবেই। অথচ তখনও তাঁদের উড়ােজাহাজ সম্পর্কে কোনাে ধারণাই ছিল না। একটি কোন ভাবনা ছিল তাদের ভাবনারও এ যে তৈরি হতে পারে, যাতে চড়ে একদিন মানুষও আকাশ পাড়ি দেবে, তেমন অতীত পরে রাইট পরিবার চলে যান রিটাচমন্ড এলাকায়। সেখানে গিয়ে দুভাই হরেক রকমের ঘুড়ি বানাতে শুরু করলেন প্রতিদিন । ছােটোবেলা থেকেই দু’ভাই কৌতূহলী। এটা-সেটা তৈরি করায় উৎসাহের কমতি ছিল না । অরভিলের যখন বারাে বছর বয়স তখন তাঁর মাথায় চাপল আরেক নেশা—কাঠ খােদাই করার নেশা। তার উপর আকতে লাগলেন নানারকম নকশা। এ নেশা কিছুদিন, চলারপর এবার ছাপাখানা তৈরি করার খেয়াল চাপল মাথায়। অরভিল নিজেই একটি পুরনাে ছাপাখানা কিনে ফেললেন। তখন তার মাত্র ১৭ বছর বয়স। ছােট ভাইয়ের সাথে এসে জুটে গেলেন বড় ভাই উইলবারও—দুভাই মিলে চালাতে লাগলেন ছাপাখানা। কিছুদিন পর নিজেদের ছাপাখানা থেকেই দুভাই মিলে প্রকাশ করতে শুরু করলেন একটি সাময়িক পত্রিকা। পত্রিকাটি ধীরে ধীরে জনপ্রিয়ও হয়ে উঠল। বাড়তে লাগল প্রচার সংখ্যা। কিন্তু তবু শেষরক্ষা করতে পারলেন না। কারণ, যুগটা ছিল শিল্পবিপ্লবের । চারদিকে চলছে নানারকম শিল্পকারখানা স্থাপনের প্রচণ্ড তােলপাড়। প্রকাশ করা হচ্ছিল অনেক বড় বড় দৈনিক এবং সাময়িক পত্রিকাও। তাই এই বড় বড় পত্রিকার চাপে পড়ে দুভাইয়ের পরিবানা হালের পত্রিকাটির মার খাবার দশা। তাদের পত্রিকার বিক্রিও কমে আসতে লাগল দ্রুত। শেষে একদিন তারা বন্ধই করে দিলেন এর ছাপার কাজ । প্রেসটাও আর চলে না। ফলে ওটাও বিক্রি করে দেওয়া হলাে। প্রেসের কাজ বন্ধ করার পর আবার নতুন করে ভাবতে লাগলেন রাইট ব্রাদার্স এবার কী করা যায়। কিছু তাে একটা করতেই হবে। অনেক চিন্তাভাবনা শেষে এবার তাঁরা খুলে ফেললেন একটি সাইকেল তৈরির কারখানা। এ ব্যবসাটা অবশ্য মােটামুটি ভালােই চলতে লাগল। তারা যখন ডেটন শহরে নিজেদের তৈরি সাইকেল বিক্রি করায় ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ই জার্মানির অটো এবং গুস্তাভ লিলিয়েনথাল নামের দুই ব্যক্তিও আকাশযান তৈরি করার চেষ্টা করছিলেন। তাঁরা উড়তে চেষ্টা করছিলেন পাখির অনুকরণে—বিশাল পাখা তৈরি করে তার সাহায্যে। কিন্তু সে চেষ্টা করতে গিয়েই ঘটল দুর্ঘটনা। ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে উড়াল করতে গিয়ে অটো এবং লিলিয়ানথাল দুজনেই দুর্ঘটনায় মারা গেলেন। একেবারে মর্মান্তিক মৃত্যু। ঘটনা শুনে রাইট ব্রাদার্স খুবই দুঃখিত হলেন। কিন্তু এই দুঃখই তাদের অন্তরে জন্ম। দিল এক নতুন চিন্তাধারার। তারা ভাবতে লাগলেন, অটো এবং লিলিয়েনথালের মতাে অমন উড়ন্ত মেশিন তৈরি করা যায় কি না। যে প্রচেষ্টা চালাতে গিয়ে তাঁরা তাঁদের জীবন। দিয়েছেন, তাকে সার্থক করে তােলা যায় কি না। এরপর থেকেই রাইট ভাইদের মাথায়। কেবলই নতুন নতুন চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল। একদিনের ঘটনা। বড় ভাই উইলবার রাইট দেখলেন, তাঁদের দোকানের এক কোনায় পড়ে আছে বড়সড়ো একটা কাঠের খালি বাক্স। বাক্সটা দেখেই উইলবারের মাথায় সঙ্গে একটা বুদ্ধি খেলে গেল। তিনি ভাবলেন, এটার পাশে যদি পাথী লাগানাে যায়, তা হলে কেমন হয় ? এর অনুকরণেই তাে উড়ন্ত জাহাজ তৈরি করা সম্ভব। তিনি আরও চিন্তা করলেন, পাখা এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে করে ওভার সময় সেটাকে উপরে-নিচে করা যায়। যে চিন্তা সেই কাজ। পরদিন থেকে তারা শুরু। করলেন নতুন মডেলের উড়ােজাহাজ তৈরির কাজ। আর সেই কাজ শেষ হলাে ১৮৯টি খ্রিস্টাব্দে। এটা ছিলো আসলে একটা ঘড়ির আকারবিশিষ্ট বাইপ্লেন। দিনক্ষণ ঠিক করে এক একদিন দুভাই একসঙ্গে চলে গেলেন করােলিনাতে। সেখানে তাদের তৈরি বাইপ্লেন ওড়ানাের প্রশিক্ষণ নিতে বেশ কয়েক মাস ধরে চলল প্রশিক্ষণ, কিন্তু জিনিসটাকে সহজে বাগ মানাতে পারী গেল না। এর পরও তারা হাল ছাড়লেন না। প্রায় বছর চারেক তাঁরা চালিয়ে গেলেন এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার কাজ। কিন্তু দ্রুত উন্নতির কোনাে লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না। ধীরে ধীরে এগুতে লাগল কাজ। বার বার ব্যার্থ হলেও আশা ছাড়লেন না মােটেও। চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলেন ক্রমাগত। তৈরি করতে লাগলেন আকাশযানের নতুন নতুন মডেল। অবশেষে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর এল সেই সাফল্য। সেদি উত্তর। করােলিনার কিটি হকের কাছে কিল ডেভিল পাহাড় থেকে অরভিল সর্বপ্রথম ওড়ালেন তার নিয়ন্ত্রণিত আকাশযান। এটাই বিশ্বের সর্বপ্রথম উড়ােজাহাজ বলে স্বীকৃত। এতে ছিল ১২ অশ্বশক্তিসম্পন্ন একটি ইঞ্জিন। এ ইঞ্জিনটি তৈরি করেছিলেন বড় ভাই উইলবার রাইট। বাইপ্লেনটি ১০ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে ৩৭ মিটার পথ পাড়ি দিতে সক্ষম হয়। উড়ােজাহাজ আকাশে ওড়ার সেই হলাে শুরু। আর এই বিশেষ কৃতিত্বের জন্যই রাইট ব্রাদার্সকে উড়ােজাহাজের আবিষ্কারক বলে স্বীকৃত দেওয়া হয় । এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় উড্ডয়নও পরিচালিত হয় অরভিল রাইটের দ্বারাই । চতুর্থ এবং সর্বশেষ উডডয়ন পরিচালনা করে উইলবার রাইট। সবশেষ উডডয়নে তিনি পুরাে এক মিনিট আকাশে উড়ে থাকতে সক্ষম হন এবং ৮৫০ ফুট দূরত্ব অতিক্রম করেন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তারা চলে আসেন ফ্রান্সে। এখানেও চলতে লাগল ক্রমাগত গবেষণা, পাশাপাশি প্রশিক্ষণের কাজ। আকাশে ওড়ার চেষ্টাও চলতে লাগল একের পর এক। ক্রমে তাদের ইঞ্জিনকে আরও উন্নত করা হতে থাকে। এরি মধ্যে উইলবার তার উড়ােজাহাজকে ৯১ মিটার পর্যন্ত ওপর দিয়ে ওড়াতে সক্ষম হন। কিন্তু ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে মারাত্মক টাইফয়েড রােগে আক্রান্ত হয়ে একেবারে আকস্মিকভাবে মারা যান তিনি। এবার একা হয়ে গেলেন ছােট ভাই অরভিল। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর জন্যে দুঃখ পেলেও একেবারে ভেঙে পড়লেন না তিনি। গবেষণা বন্ধ করলেন না । আকাশযানে করে ওড়াওড়ির কাজ তিনি একাই চালিয়ে যেতে লাগলেন। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পরও নিজের তৈরি প্লেন চালিয়ে তিনি ২৭ মিটার পর্যন্ত ওপরে উঠাতে সক্ষম হন। উড়ােজাহাজ নিয়ে গবেষণা এবং উড্ডয়ন প্রশিক্ষণের জন্য তিনি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন রাইট অ্যারােনটিক্যাল ল্যাবরেটরি । এর পরই দ্রুত উন্নতি হতে লাগল উড়ােজাহাজের। বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর আরও অনেকদিন পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন অরভিল রাইট। সৌভাগ্য যে, তাঁর জীবিত থাকাকালেই উড়ােজাহাজের গতি সুপারসনিক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিল । ঘণ্টায় ৪৮০ কিলােমিটার (৩০০ মাইল) পর্যন্ত গতিবেগ অর্জন করেছিল। কিন্তু উড়ােজাহাজের আদি জন্মদাতা হিসেবে রাইট ভাইদের স্বীকৃতি আজ বিশ্ববিশ্রুত। কিটি হকে তাঁরা সর্বপ্রথম যে উড়ােজাহাজটি নিয়ে আকাশে ওড়ার সার্থক অভিযান। পরিচালনা করেছিলেন, সেটি ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামে (National Air and Space Museum) এখনও রক্ষিত আছে। অরভিল রাইট পরিণত বয়সে মারা যান ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি ।
تعليق واحد
Md Moksed Ali
9 ديسمبر 2022 في 5:16 ص
Nice
إرسال تعليق
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.