ইপিকুরাস
(৩৪২-২৭০ খ্রিস্টপূর্ব)
গ্রিসের প্রাচীন দর্শনশাস্ত্রের অন্যতম দিকপাল মহাজ্ঞানী ইপিকুরাস (Epictuirus) ।
সক্রেটিস, প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের পরবর্তী সময়কার গ্রিসের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তিদের
একজন বলে গণ্য। তিনি বলতেন, পৃথিবীটা দুঃখের নয়, আনন্দ, প্রেম, ভালবাসা আর
আত্মার উন্নতি বিধানের মাধ্যমে একে সুন্দর করে তুলতে হবে। আনন্দ এবং হাসিতে
তাঁর।
ভরে দিতে হবে। এসাে, আমরা দুঃখকে বিদায় জানাই এবং হাসি-আনন্দকে ধরে রাখি।
এই আনন্দ সৃষ্টির দর্শনকে প্রসারের জন্যই তিনি এথেন্সে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
দর্শনশাস্ত্রের স্কুল। সেখানেই তিনি তাঁর আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজে নিজেকে নিয়ােজিত
করেছিলেন। প্রভাবিত করেছিলেন সেই আদর্শে তাঁর শিক্ষার্থীদের। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ অব্দ
থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তার আনন্দময় দর্শনের প্রভূত প্রভাব ছিল গ্রিস সহ সাৱা
ইউরােপে।
নিরানন্দ পৃথিবীর বুকে স্বর্গের আনন্দবার্তার বাহক ইপিকুরাসের জন্ম হয়েছিল ৩৪২
খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিসের সামােস দ্বীপে।
তার আদিবাস ছিল গ্রিসের মূল ভূখণ্ডেই। পিতা নিওসে ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মা
ছিলেন সমাজের একজন বিদুষী মহিলা।
পিতা নিওসে প্রথম জীবনে চাকরি করতেন সেনাবাহিনীতে। সামােস দ্বীপ গ্রিক
অধিকারে আসার পর সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে স্ত্রীকে নিয়ে এসে এখানেই গড়ে
তােলেন স্থায়ী নিবাস। তাঁরা বসতি স্থাপন করেছিলেন সামােস দ্বীপের গারগেটোস
গ্রামে।
এখানেই জন্ম ইপিকুরাসের। তাঁর আত্মচরিত থেকে জানা যায়, ১৪ বছর বয়সে
গ্রামের এক দর্শনশাস্ত্রের স্কুলে শুরু হয় তাঁর শিক্ষাজীবন। এখানে অধ্যয়নকালেই তিনি
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক ও কবি হেসিয়ডের কাব্যের সাথে প্রথম পরিচিত হন। তার প্রথম
স্কুলশিক্ষক ছিলেন প্লেটোর মতবাদে বিশ্বাসী পামফিলাস।
গ্রামে শিক্ষা শেষ করে তিনি আসেন টিয়ােস শহরে। এখানে তিন বছর (৩২৭
থেকে ৩২৪ খ্রি. পূ.) দর্শনশাস্ত্রের ওপর অধ্যয়ন করেন। এ সময় তিনি গ্রিসের আরেক
শ্রেষ্ঠ দার্শনিক ডেমােক্রিটাসের সান্নিধ্যে আসার সুযােগ পান।
১৮ বছর বয়সে আসেন রাজধানী এথেন্সে। এখানে তাকে দু'বছর সামরিক প্রশিক্ষণ
গ্রহণ করতে হয়। উল্লেখ্য, সেকালে গ্রিসের প্রতিটি নাগরিকের জন্যই সামরিক প্রশিক্ষণ
ছিল আবশ্যকীয়।
তবে এথেন্সে এসে তাঁর সবচেয়ে বড় লাভ হয়েছিল দু জন শ্রেষ্ঠ দার্শনিকের
সান্নিধ্যলাভ। এঁদের একজন মহাজ্ঞানী প্লেটো প্রতিষ্ঠিত দর্শন অ্যাকাডেমির মহাধ্যক্ষ ও
প্লেটোর দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী দার্শনিক জেনােক্র্যাটস (Xenocrates) এবং অন্যজন
হলেন স্বয়ং অ্যারিস্টটল। এথেন্সে বসবাস করার সময়ই তিনি এই দুই মহান ব্যক্তির
শিষ্যত্ব গ্রহণ এবং দর্শনশাস্ত্রে প্রচুর জ্ঞানার্জন করেন।
এ সময় তাঁর স্বদেশভূমি সামােসে এক দুর্ঘটনা ঘটে। দ্বীপটি গ্রিকদের কাছ থেকে
মেসােডােনিয়ানরা কেড়ে নেয় এবং দ্বীপ থেকে তাঁদেরকে তাড়িয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে
ইপিকুরাসের পিতামাতাও স্বদেশ ছেড়ে এসে আশ্রয় নেন গ্রিসের কনােফন শহরে।
ইপিকুরাসও এথেন্স থেকে ফিরে এসে এই কনােফন শহরে মিলিত হন বাবা-মায়ের
কিন্তু এখানেও স্থায়ীভাবে থাকা হলাে না তার। তিনি আবার বেরিয়ে পড়লেন পথে ।
এর পর থেকে দশটি বছর তিনি কোথায় ছিলেন, কী করেছিলেন, তার কোনাে হদিশ
পাওয়া যায়নি। সম্ভবত এই দশটি বছর তিনি ঘুরে বেড়িয়েছিলেন দেশ থেকে দেশান্তরে।
তাঁর এই দীর্ঘ অন্তর্ধানের সময় জুড়ে মাকে দুয়েকটি চিঠি লিখতেন মাত্র। এ ছাড়া আর
কোনো খবর ছিল না তার।
এরপর ৩২ বছর বয়সে ৩১১ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে শুরু করেন তিনি তাঁর স্বাভাবিক
জীবনযাপন। প্রথমে মাইটিলেন শহরে খােলেন দর্শনশাস্ত্রের একটি স্কুল। বছর খানেক
সেখানে থাকার পর ৩১০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে চলে আসেন ল্যাম্পসাকাস শহরে। এখানে এসে
একটি স্কুল খােলেন। এটি মাত্র বছরখানেক স্থায়ী হয়েছিল।
এর পরই তিনি ছাত্রদের নিয়ে সােজা চলে যান এথেন্সে। সেখানে গিয়ে তিনি
কেনেন বিশাল একটা বাড়ি। এই বাড়িতেই যে স্কুল খােলেন তার নাম দেন হেকেপস।
এর অর্থ বাগানবাড়ি। এখানেই স্থাপিত হয় ইপিকুরাসের দর্শনশাস্ত্রের স্কুল। প্রচার করতে
থাকেন নিজস্ব মতবাদ। বাড়তে থাকে তাঁর জনপ্রিয়তা। সেইসাথে ছাত্রের সংখ্যাও।
এথেন্সে আরও দুটো স্কুল ছিল। এর একটি প্লেটো প্রচারিত মতবাদের স্কুল।
অ্যারিস্টটলীয় মতবাদের স্কুল।
সেকালে এথেন্সে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা বলতে কেবল প্লেটো ও অ্যারিস্টটলীয়
মতবাদের প্রচার ও প্রসারের ব্যাপারটিকেই বােঝানাে হতাে। কিন্তু ইপিকুরাসের
প্রতিষ্ঠিত স্কুলের একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। পুরনাে স্কুলগুলাে ছিল একটি বিশেষ
শ্রেণীর অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে দর্শনের তাত্ত্বিক জ্ঞানচর্চা হত।
কিন্তু ইপিকুরাস তার প্রতিষ্ঠিত দর্শনের স্কুলকে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে
গেলেন। এর আগে দর্শনশাস্ত্রের কোনাে স্কুলে মেয়েদের জ্ঞানচর্চার সুযােগ ছিল না। কিন্তু
ইপিকুরাস তার স্কুলে মেয়েদের প্রবেশাধিকার দিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি আরাে একটি
দুঃসাহসিক কাজ করেছিলেন। মােস নামের একজন ক্রীতদাসকে পর্যন্ত তিনি স্কুলে ভর্তি
হবার সুযােগ দিয়েছিলেন। অভিজাতদের সাথে সমান মর্যাদার আসন দিয়েছিলেন
ক্রীতদাসকে, সে যুগে যা কেউ কল্পনাও করতে পারত না। সমাজব্যবস্থার আদিপর্বেই
শুধু এখানেই শেষ নয়। তিনি তাঁর স্কুলে আরও কিছু চিন্তাধারার বিকাশ
বলতেন, ছাত্রদের অধ্যয়নে হতে হবে একান্তই নিষ্ঠাবান।
এমন আধুনিক সমাজবাদী চিন্তাধারার বিকাশ,ভাবতেও অবাক লাগে।
ঘটিয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষার্থীদের তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানাতেন।
প্লেটোর দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী দার্শনিক জেনােক্র্যাটস (Xenocrates) এবং অন্যজন
হলেন স্বয়ং অ্যারিস্টটল। এথেন্সে বসবাস করার সময়ই তিনি এই দুই মহান ব্যক্তির
শিষ্যত্ব গ্রহণ এবং দর্শনশাস্ত্রে প্রচুর জ্ঞানার্জন করেন।
এ সময় তাঁর স্বদেশভূমি সামােসে এক দুর্ঘটনা ঘটে। দ্বীপটি গ্রিকদের কাছ থেকে
মেসােডােনিয়ানরা কেড়ে নেয় এবং দ্বীপ থেকে তাঁদেরকে তাড়িয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে
ইপিকুরাসের পিতামাতাও স্বদেশ ছেড়ে এসে আশ্রয় নেন গ্রিসের কনােফন শহরে।
ইপিকুরাসও এথেন্স থেকে ফিরে এসে এই কনােফন শহরে মিলিত হন বাবা-মায়ের
কিন্তু এখানেও স্থায়ীভাবে থাকা হলাে না তার। তিনি আবার বেরিয়ে পড়লেন পথে ।
এর পর থেকে দশটি বছর তিনি কোথায় ছিলেন, কী করেছিলেন, তার কোনাে হদিশ
পাওয়া যায়নি। সম্ভবত এই দশটি বছর তিনি ঘুরে বেড়িয়েছিলেন দেশ থেকে দেশান্তরে।
তাঁর এই দীর্ঘ অন্তর্ধানের সময় জুড়ে মাকে দুয়েকটি চিঠি লিখতেন মাত্র। এ ছাড়া আর
কোনো খবর ছিল না তার।
এরপর ৩২ বছর বয়সে ৩১১ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে শুরু করেন তিনি তাঁর স্বাভাবিক
জীবনযাপন। প্রথমে মাইটিলেন শহরে খােলেন দর্শনশাস্ত্রের একটি স্কুল। বছর খানেক
সেখানে থাকার পর ৩১০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে চলে আসেন ল্যাম্পসাকাস শহরে। এখানে এসে
একটি স্কুল খােলেন। এটি মাত্র বছরখানেক স্থায়ী হয়েছিল।
এর পরই তিনি ছাত্রদের নিয়ে সােজা চলে যান এথেন্সে। সেখানে গিয়ে তিনি
কেনেন বিশাল একটা বাড়ি। এই বাড়িতেই যে স্কুল খােলেন তার নাম দেন হেকেপস।
এর অর্থ বাগানবাড়ি। এখানেই স্থাপিত হয় ইপিকুরাসের দর্শনশাস্ত্রের স্কুল। প্রচার করতে
থাকেন নিজস্ব মতবাদ। বাড়তে থাকে তাঁর জনপ্রিয়তা। সেইসাথে ছাত্রের সংখ্যাও।
এথেন্সে আরও দুটো স্কুল ছিল। এর একটি প্লেটো প্রচারিত মতবাদের স্কুল।
অ্যারিস্টটলীয় মতবাদের স্কুল।
সেকালে এথেন্সে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা বলতে কেবল প্লেটো ও অ্যারিস্টটলীয়
মতবাদের প্রচার ও প্রসারের ব্যাপারটিকেই বােঝানাে হতাে। কিন্তু ইপিকুরাসের
প্রতিষ্ঠিত স্কুলের একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। পুরনাে স্কুলগুলাে ছিল একটি বিশেষ
শ্রেণীর অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে দর্শনের তাত্ত্বিক জ্ঞানচর্চা হত।
কিন্তু ইপিকুরাস তার প্রতিষ্ঠিত দর্শনের স্কুলকে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে
গেলেন। এর আগে দর্শনশাস্ত্রের কোনাে স্কুলে মেয়েদের জ্ঞানচর্চার সুযােগ ছিল না। কিন্তু
ইপিকুরাস তার স্কুলে মেয়েদের প্রবেশাধিকার দিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি আরাে একটি
দুঃসাহসিক কাজ করেছিলেন। মােস নামের একজন ক্রীতদাসকে পর্যন্ত তিনি স্কুলে ভর্তি
হবার সুযােগ দিয়েছিলেন। অভিজাতদের সাথে সমান মর্যাদার আসন দিয়েছিলেন
ক্রীতদাসকে, সে যুগে যা কেউ কল্পনাও করতে পারত না। সমাজব্যবস্থার আদিপর্বেই
শুধু এখানেই শেষ নয়। তিনি তাঁর স্কুলে আরও কিছু চিন্তাধারার বিকাশ
বলতেন, ছাত্রদের অধ্যয়নে হতে হবে একান্তই নিষ্ঠাবান।
এমন আধুনিক সমাজবাদী চিন্তাধারার বিকাশ,ভাবতেও অবাক লাগে।
ঘটিয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষার্থীদের তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানাতেন।
প্লেটোর দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী দার্শনিক জেনােক্র্যাটস (Xenocrates) এবং অন্যজন
হলেন স্বয়ং অ্যারিস্টটল। এথেন্সে বসবাস করার সময়ই তিনি এই দুই মহান ব্যক্তির
শিষ্যত্ব গ্রহণ এবং দর্শনশাস্ত্রে প্রচুর জ্ঞানার্জন করেন।
এ সময় তাঁর স্বদেশভূমি সামােসে এক দুর্ঘটনা ঘটে। দ্বীপটি গ্রিকদের কাছ থেকে
মেসােডােনিয়ানরা কেড়ে নেয় এবং দ্বীপ থেকে তাঁদেরকে তাড়িয়ে দেয়। বাধ্য হয়ে
ইপিকুরাসের পিতামাতাও স্বদেশ ছেড়ে এসে আশ্রয় নেন গ্রিসের কনােফন শহরে।
ইপিকুরাসও এথেন্স থেকে ফিরে এসে এই কনােফন শহরে মিলিত হন বাবা-মায়ের
কিন্তু এখানেও স্থায়ীভাবে থাকা হলাে না তার। তিনি আবার বেরিয়ে পড়লেন পথে ।
এর পর থেকে দশটি বছর তিনি কোথায় ছিলেন, কী করেছিলেন, তার কোনাে হদিশ
পাওয়া যায়নি। সম্ভবত এই দশটি বছর তিনি ঘুরে বেড়িয়েছিলেন দেশ থেকে দেশান্তরে।
তাঁর এই দীর্ঘ অন্তর্ধানের সময় জুড়ে মাকে দুয়েকটি চিঠি লিখতেন মাত্র। এ ছাড়া আর
কোনো খবর ছিল না তার।
এরপর ৩২ বছর বয়সে ৩১১ খ্রিষ্টপূর্ব থেকে শুরু করেন তিনি তাঁর স্বাভাবিক
জীবনযাপন। প্রথমে মাইটিলেন শহরে খােলেন দর্শনশাস্ত্রের একটি স্কুল। বছর খানেক
সেখানে থাকার পর ৩১০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে চলে আসেন ল্যাম্পসাকাস শহরে। এখানে এসে
একটি স্কুল খােলেন। এটি মাত্র বছরখানেক স্থায়ী হয়েছিল।
এর পরই তিনি ছাত্রদের নিয়ে সােজা চলে যান এথেন্সে। সেখানে গিয়ে তিনি
কেনেন বিশাল একটা বাড়ি। এই বাড়িতেই যে স্কুল খােলেন তার নাম দেন হেকেপস।
এর অর্থ বাগানবাড়ি। এখানেই স্থাপিত হয় ইপিকুরাসের দর্শনশাস্ত্রের স্কুল। প্রচার করতে
থাকেন নিজস্ব মতবাদ। বাড়তে থাকে তাঁর জনপ্রিয়তা। সেইসাথে ছাত্রের সংখ্যাও।
এথেন্সে আরও দুটো স্কুল ছিল। এর একটি প্লেটো প্রচারিত মতবাদের স্কুল।
অ্যারিস্টটলীয় মতবাদের স্কুল।
সেকালে এথেন্সে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চা বলতে কেবল প্লেটো ও অ্যারিস্টটলীয়
মতবাদের প্রচার ও প্রসারের ব্যাপারটিকেই বােঝানাে হতাে। কিন্তু ইপিকুরাসের
প্রতিষ্ঠিত স্কুলের একটি আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। পুরনাে স্কুলগুলাে ছিল একটি বিশেষ
শ্রেণীর অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যেখানে দর্শনের তাত্ত্বিক জ্ঞানচর্চা হত।
কিন্তু ইপিকুরাস তার প্রতিষ্ঠিত দর্শনের স্কুলকে সাধারণ মানুষের আরও কাছাকাছি নিয়ে
গেলেন। এর আগে দর্শনশাস্ত্রের কোনাে স্কুলে মেয়েদের জ্ঞানচর্চার সুযােগ ছিল না। কিন্তু
ইপিকুরাস তার স্কুলে মেয়েদের প্রবেশাধিকার দিলেন। শুধু তাই নয়, তিনি আরাে একটি
দুঃসাহসিক কাজ করেছিলেন। মােস নামের একজন ক্রীতদাসকে পর্যন্ত তিনি স্কুলে ভর্তি
হবার সুযােগ দিয়েছিলেন। অভিজাতদের সাথে সমান মর্যাদার আসন দিয়েছিলেন
ক্রীতদাসকে, সে যুগে যা কেউ কল্পনাও করতে পারত না। সমাজব্যবস্থার আদিপর্বেই
শুধু এখানেই শেষ নয়। তিনি তাঁর স্কুলে আরও কিছু চিন্তাধারার বিকাশ
বলতেন, ছাত্রদের অধ্যয়নে হতে হবে একান্তই নিষ্ঠাবান।
এমন আধুনিক সমাজবাদী চিন্তাধারার বিকাশ,ভাবতেও অবাক লাগে।
ঘটিয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষার্থীদের তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানাতেন।তাঁর স্কুলের ছাত্রদের তিনি সবসময় সাদাসিধে জীবনযাপন করার উপদেশ দিতেন।
বিলাসিতা ছিল সর্বতােভাবে বর্জনীয়। কৃজ্ঞতা সাধন করতে হতাে সবাইকে। যে কোনাে
রকম অপচয় ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ। দুর্ভিক্ষের সময় তার ছাত্রদের এমন সংযম পালন
করতে হতাে যে, দিনে তাদের ভাগে পড়ত কেবল গােটা কয়েক শিমের বিচি ।
ইপিকুরাসের স্কুলে কোনাে ধরনের বর্ণবৈষম্য বা জাতিভেদপ্রথা ছিল নিষিদ্ধ। অথচ
প্লেটো, অ্যারিস্টটল ও পিথাগােরাসের স্কুলগুলােতে এ ধরনের বৈষম্য ব্যাপকভাবে মেনে
চলা হতাে।
ইপিকুরাসের মতবাদ ও আদর্শের এখানেই বিশিষ্টতা এবং সেযুগের বিচারে ছিল
খুবই আধুনিক ।
ইপিকুরাস তাঁর আদর্শ ও মতবাদকে পৃথক কোনাে গ্রন্থে সংকলিত করে যাননি।
তবে তিনি বহু চিঠিপত্র ও প্রবন্ধে তা লিপিবদ্ধ করে গেছেন। সেইসব প্রবন্ধ ও চিঠিপত্র
সংকলিত করে পরে প্রকাশ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি মূল্যবান গ্রন্থ।
তার প্রধান গ্রন্থগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য :
১. Kyriai doxia (Principal
Doctrines)। এতে আছে তাঁর প্রধান মতাদর্শের ওপর রচিত ৪০টি প্রবন্ধ;
২. Tos—আবহাওয়া বিজ্ঞানে বিষয়ে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে লিখিত পত্রসংকলন এবং
৩. To Menocceus
নীতিশাস্ত্রবিষয়ক
পরবর্তীকালে তাঁর প্রচারিত মতবাদ এতখানি প্রভাব বিস্তার করেছিল যে, তাঁর
মৃত্যুর কয়েকশাে বছর পরও তাকে ধর্মীয় মতবাদের মতো মর্যাদা দেওয়া হতাে। বহু
কবি-সাহিত্যিক তাঁর আদর্শের অনুসরণে কাব্যচর্চা করতেন। ৭২ বছর বয়সে ২৭০
খ্রিষ্টপূর্বাব্দে এই মহাজ্ঞানীর জীবনাবসান ঘটে।
Phihocles—আবহ।
